ছেলের লাশ নিয়ে ফেরার পথে বাবার মৃত্যু

প্রকাশঃ এপ্রিল ১৮, ২০১৭ সময়ঃ ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কিশোর আসাদ মণ্ডলের (১৫) ক্যানসার ধরা পড়েছিল। হাল ছাড়েননি বাবা রফিক মণ্ডল ও মা আরমা বেগম। গত বুধবার চিকিৎসার জন্য তাঁরা আসাদকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যান। চারদিনের মাথায় গতকাল রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আসাদ।

ছেলের লাশ নিয়ে দেশে ফিরছিলেন ওই দম্পতি। তবে ছেলের চলে যাওয়াটা সহ্য করতে পারেননি বাবা রফিক মণ্ডল। আজ সোমবার দেশে প্রবেশের আগেই পেট্রাপোল সীমান্তে মারা যান তিনি। ছেলে আর স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে এখনো দেশে প্রবেশ করতে পারেননি আরমা বেগম।

রফিক ও আরমা দম্পতি গাজীপুরের গোবিন্দবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। গত বুধবার আসাদের চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁরা কলকাতায় যান। আসাদ মণ্ডল অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। রফিক মণ্ডল পেশায় কৃষক। কোনোমতে টাকা-পয়সা জোগাড় করে ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁরা কলকাতায় যান। কলকাতায় এসে একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে আসাদের চিকিৎসাও শুরু হয়। কিন্তু গতকাল রোববারই আসাদ মারা যায়।

এরপর সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে আজ সোমবার আসাদের লাশ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা দেন আরমা বেগম ও রফিক মণ্ডল। ছেলের লাশ নিয়ে সোমবার দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্তেও পৌঁছে যান তাঁরা। এরপর সীমান্ত পার হওয়ার আগে পেট্রাপোলে অপেক্ষারত অবস্থায় হঠাৎই রফিক মণ্ডল বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় স্থানীয় রামেশ্বর রায় নামে এক ব্যক্তির সাহায্যে বাথরুমে যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই বমি ও প্রচণ্ড বুকে ব্যথায় জ্ঞান হারান তিনি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রফিক মণ্ডলকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছেলের অকালমৃত্যুর পর স্বামীকেও হারিয়ে এখন স্তব্ধ হয়ে আছেন আরমা বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ছেলের শোকেই ওর বাবা চলে গেল। ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসত সে।’ অসহায় অবস্থায় আছেন আরমা বেগম।

এই ঘটনায় বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধানসভার সদস্য বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘বাংলাদেশের ওই নারী মৃত ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। ছেলের মৃতদেহ বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার পথে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন থেকে মৃতদেহের ছাড়পত্র আনার জন্য পেট্রাপোলে অপেক্ষা করছিলেন রফিক মণ্ডল নামে বাংলাদেশি ওই ব্যক্তি। ওই সময় মারা যান তিনি। তবে স্বামী ও ছেলের মৃতদেহ নিয়ে সীমান্তের ধারে অসহায় ওই বাংলাদেশি মাকে সব রকমভাবে সাহায্যের চেষ্টা করছি আমি।’

প্রতিক্ষণ/এডি/শন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G